সিরাজদিখান প্রতিনিধিঃ
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার উপজেলার জৈনসার ইউনিয়নের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে দুই দফায় জৈনসার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নাজিম শেখ ও উপজেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মোঃ তৌহিদুজ্জামান টিটু পক্ষের মধ্যে মারপিটের এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় উভয় পক্ষ তাদের প্রতিপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে সিরাজদিখান থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। আহতরা হলেন, কাঠালতলী গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বার মৃধার ছেলে মোঃ ইব্রাহীম বাবু, জৈনসার গ্রামের আব্দুল হালিম দেওয়ানের ছেলে আরিফ, উপজেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মোঃ তৌহিদুজ্জামান টিটু, উপজেলা শ্রমিক দিলের যুগ্ম আহবায়ক নবি নুর হোসেন ও জৈনসার ইউনিয়ন যুবদল নেতা মোঃ হৃদয়। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে জৈনসার গ্রামের আব্দুল হালিম দেওয়ানের বসত বাড়িতে গিয়ে ড্রেজার দিয়ে জমি ভরাট করতে হলে চাঁদা দিতে হবে মর্মে চাঁদা চেয়ে না পেয়ে ছেলে আরিফ ও মেয়ে ঝুমা আক্তারকে মারধর করে মোঃ তৌহিদুজ্জামান টিটু পক্ষের হৃদয় শেখ, মাসুদ, নবু, বাবু ও আনোয়ারসহ আরো ৫/৬ জন। আব্দুল হালিম দেওয়ান চাঁদা না দেওয়ায় মারধরের বিষয়টি জৈনসার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নাজিম শেখকে জানান। বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে জৈনসার ইউনিয়নের চালতাতলা তেমুনি তিন রাস্তার মোড়ে মোঃ তৌহিদুজ্জামান টিটু ও তার পক্ষের লোকজনের কাছে চাঁদাবাজীর বিষয়ে জানতে চাইলে এ নিয়ে নাজিম শেখের সাথে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে মারপিটের ঘটনা ঘটে। এতে তৌহিদুজ্জামান টিটু ও তার পক্ষের নবি নুর হোসেন ও মোঃ হৃদয়সহ নাজিম শেখ পক্ষের মোঃ ইব্রাহীম বাবু আহত হন। এসময় নাজিম শেখ তৌহিদুজ্জামান টিটুকে ধাক্কা দিয়ে চলে যেতে বললে টিটুসহ তার লোকজন জৈনসার ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয়ের চেয়ার টেবিল ভাংচুর করে কার্যালয়ে টাঙানো ব্যানার ছিড়ে ফেলে। পরে মারপিটে আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এ ঘটনায় মোঃ তৌহিদুজ্জামান টিটুর স্ত্রী মোসাঃ সানোয়ারা বাদী হয়ে একই দিন দুপুরে জৈনসার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ নাজিম উদ্দিনসহ মোঃ সোহেল, মোঃ আবু তাহের, ইকবাল হোসেন, মোঃ ইব্রাহিম, মোঃ জামাল শেখ ও মোঃ আক্তার হোসেনকে বিবাদী করে সিরাজদিখান থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। একই ঘটনায় মোঃ ইব্রাহীম বাবু বাদী হয়ে মোঃ তৌহিদুজ্জামান টিটুসহ আরো তিন জনকে বিবাদী করে সিরাজদিখান থানায় অপর আরো একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়া চাঁদা না দেওয়ায় মারধরের ঘটনায় আব্দুল হালিম দেওয়ান বাদী হয়ে হৃদয় শেখ, মাসুদ, নবু, বাবু ও আনোয়ারসহ আরো ৫/৬ জনকে বিবাদী করে সিরাজদিখান থানায় আরো একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নাজিম শেখ ও তৌহিদুজ্জামান টিটু পক্ষের মধ্যে মারপিটের ঘটনা ঘটলেও এক পক্ষ তাদের পতিপ্রক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজীর অভিযোগসহ নানা অভিযোগ তুলে দোষারোপ করছেন। নাজিম শেখ ও তৌহিদুজ্জামান টিটু একই ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং তাদের পরস্পরের সাথে বংশগত সম্পর্ক রয়েছে। তারা এক বংশের লোক হলেও দুইজন দুই বিএনপি নেতার সমর্থন করায় তাদের মধ্যে স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার ও প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব চলে আসছে অনেক আগে থেকেই। এমনটাই স্থানী লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়।
জৈনসার ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি নাজিম শেখ বলেন, টিটু এক সময় ছাত্রলীগ করতো আমিই তাকে বিএনপিতে এনে পদ দিয়েছি। এখন সে আওয়ামী লীগের দালালী করে বিএনপির বদনাম করাসহ এলাকায় বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। সে চাঁদাবাজী করতে গিয়ে মানুষকে মারধর করেছে। তাই তাকে বিএনপি থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি। আজকে আমি তাকে এসব ব্যপারে জিজ্ঞেস করায় লোকজন নিয়ে এসে আমাদের ক্লাব ভাংচুর করেছে। আমি তাকে একটা ধাক্কা দিয়েছি। কিন্তু সে আমার কয়েকজনকে মারধর করে গিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগও করেছে। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবো। উপজেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মোঃ তৌহিদুজ্জামান টিটু বলেন, জৈনসার ইউনিয়ন বিএনপিতে আওয়ামী লীগের লোকজনকে টাকার বিনিময়ে পদ দেওয়া হয়েছে। আমি এর প্রতিবাদ করায় নাজিম শেখ আমাকে কিল ঘুষি মারে। তার ছেলে সোহেল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের তাহের, ইকবাল ও মোঃ ইব্রাহীম মৃধা বাবু এলাকায় চাঁদাবাজী, জবর দখল ও সন্ত্রাসী শুরু করেছে। আমি তাদের প্রতিবাদ করায় আমার উপর হামলা করেছে।সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুক্তার হোসেন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।