সুমন ইসলাম:
মুন্সীগঞ্জের রতনপুরে পুলিশি মামলা ও মারধরের হুমকি ধামকি, ভয়ভীতি দেখিয়ে একজন নিরীহ বৃদ্ধের বাড়ির জায়গা জোরপূর্বক দখল করে সেখানে কাবিখা প্রকল্পের অর্থায়নের আরসিসি পাকা রাস্তা নির্মাণ করে দিয়েছেন পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী গোলাম মোস্তফার তার মালেয়াশিয়া প্রবাসী ব্যবসায়ী বন্ধুর জন্য ।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালের দিকে সরেজমিন সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের রতনপুর এলাকায় গিয়ে এমন অনিয়মের ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের রতনপুর এলাকার আবুল বাশার নামে এক বৃদ্ধের বসতবাড়ির উপর দিয়ে মালেয়াশিয়া প্রবাসী আশোক আলী নামে ব্যবসায়ী বন্ধুর বাড়ির লোকদের চলাচলের জন্য আরসিসি পাকা রাস্তা নির্মাণ করে দেয় পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী গোলাম মোস্তফা।
এদিকে ওই রাস্তার কাজ বন্ধ করার জন্য প্রথমে আকুতি মিনতি অনুরোধ করে ব্যর্থ হয়ে পরে প্রতিবাদ জানালে উল্টো ইউপি চেয়ারম্যান হাজী গোলাম মোস্তফা তার লোকজন দিয়ে পুলিশ ডেকে এনে বৃদ্ধ আবুল বাশার সহ তাদের পরিবারকে মামলা ও মারধরের হুমকি ধামকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন।
এর আগেও মালেয়াশিয়া প্রবাসী মোঃ মাশোক আলীর লোকজন বৃদ্ধের পরিবারকে মারধর করেন। আর ওই ঘটনায় বৃদ্ধের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী মাকসুদা বেগম গত ৮ মে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় মোঃ মাশোক আলী, মোঃ শামীম হোসেন নামে দু’জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
এদিকে এছাড়াও গত ১৪ মে মাসে বাড়ির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবিতে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন ওই ভুক্তভোগী বৃদ্ধের পরিবার। মামলা নং – ১৪৮/২০২৪।
এদিকে এই বৃদ্ধা আদালত এবং থানার মামলা দায়ের করলেও তা উপেক্ষা করে ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা তার লোকজন দিয়ে জোরপূর্বক ওই বৃদ্ধের বাড়ির জায়গা জোরপূর্বক দখল করে ইটের সলিং বিছিয়েছে এবং পরে সেটি আরসিসি পাকা রাস্তা নির্মাণ করেন।
এই বিষয়ে জায়গায় মালিক ভুক্তভোগী মাকসুদা বেগম বলেন,গত বছর রাস্তায় কাঁদা মাটি থাকায় আমার প্রতিবেশী মাশোক আলী, শামীম হোসেন তাদের বাড়ি থেকে চলাচলের রাস্তা না থাকায় স্থানীয় লোকজনের অনুরোধের মাধ্যমে আমাদের বাড়ির জায়গা দিয়ে চলাচল করতে দেয়া হয়।ওই সময় ইউপি চেয়ারম্যান,স্থানীয় মেম্বার, ইউপি সচিব মিলে লিখিত অঙ্গীকার করেন মাশোক আলীদের বাড়ির পাশ দিয়ে রাস্তা ঠিক হয়ে গেলে তারা আমাদের রাস্তা ছেড়ে দেবেন। কিন্তু তারা অঙ্গীকার ভঙ্গ করে রাস্তায় ইটের সলিং করেন। তার প্রতিবাদ করতে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন আমাদের বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে মামলা, হুমকি ধামকি, ভয়ভীতি দেখিয়ে গেছে।
অপরদিকে জায়গায় মালিক বৃদ্ধ আবুল বাশার জানান, মাশোক আলী, শামীম হোসেন আমার প্রতিবেশী। কিন্তু তারা পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার ঘনিষ্ঠজন। মালয়েশিয়া প্রবাসী মাশোক আলীর সাথে গোলাম মোস্তফার ব্যবসা রয়েছে। এজন্য চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা তার লোকজন দিয়ে জোরপূর্বক, হুমকি ধামকি ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাদের মালিকাধীন বাড়ির উপর দিয়ে ইটের সলিং বিছিয়েছে এবং দু’দিন আগে সেই রাস্তা আরসিসি ঢালাই কাজ শেষ করেছে।
আবুল বাশার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, একজন ব্যক্তির জন্য সরকারী অর্থায়নে কিভাবে আরসিসি রাস্তা নির্মাণ করে দেয়া হয় আমি জানি না।কিন্তু আমার বাড়ির উপর, আমার জায়গা দখল করে রাস্তা নির্মাণ কাজ কেন? জায়গা তো ইউপি চেয়ারম্যানের না। আমি প্রতিবাদ করতে গিয়েছি, তারা আমাদের প্রাণে মেরে ফেলবে হুমকি দেওয়া হয়। দেশে কি আইন নেই! আমরা কি বিচার পাবো না, আমার জায়গা উদ্ধার হবে না?
এদিকে এই বিষয়ে পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী গোলাম মোস্তফার সাথে যোগাযোগ করা হলে তার বক্তব্যে পাওয়া যায়নি। তবে ইউপি সচিব মোঃ রুহুল আমিন এই ঘটনার বিষয়ে জানান, রতনপুর এলাকায় গত বছর কাবিখা প্রকল্পের আওতায় ৭ মে: টন চাল ওই রাস্তার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তখন ইটের সলিং বিছানো হয়েছিল।এই চলতি মাসে ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব অর্থায়নে রাস্তাটির আরসিসি ঢালাই কাজ সম্পন্ন করা হয়।অন্যের জায়গা দখল করে রাস্তা নির্মাণ কাজ করা হয়েছে এমন অভিযোগ এড়িয়ে যান ইউপি সচিব।
অপরদিকে এই ঘটনার বিষয়ে সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আহম্মেদ রেজা জানান,অন্যের জায়গা দখল করে ইট বিছানো এবং পরে আরসিসি ঢালাই করে রাস্তা নির্মাণ কাজ হয়েছে এই বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। তবে গত বছর এই রাস্তার কাজের জন্য কাবিখা প্রকল্পের আওতায় ৬/৭ মে টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল বলে তিনি স্বীকার করেন। অন্যের জায়গা নিয়ে সরকারী রাস্তা নির্মাণ কাজ করা হলে ভুক্তভোগীর জায়গায় মালিক ক্ষতিপূরণ তো পায়, বৃদ্ধ আবুল বাশারের পরিবারকে সেই ক্ষতিপূরণ কি দেওয়া হয়েছে? এমন বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তা পাশ কাটিয়ে যায়।