“ফলকার তুর্ক “ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. আবদুল্লাহ আল ইউসুফ

Spread the love
মোঃ রুবেল
ফলকার তুর্ক, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার, একজন হোয়াইট, ইউরোপীয়ান, মেইল। চলমান বিশ্ব ব্যবস্থায় সুবিধাভোগীদের একজন।
যারা শান্তি, সংঘাত কিম্বা জেন্ডার নিয়ে লেখাপড়া করেছেন, তারা সহজেই বুঝতে পারবেন, “হোয়াইট, ইউরোপীয়ান, মেইল” বলতে কি বোঝায়। হ্যাঁ, এরাই চলমান বিশ্ব ব্যবস্থার কমান্ডিং হাইটস গুলোতে বসে আছে।
ফলকার তুর্ক যদি একজন নন-হোয়াইট, নন-ইউরোপীয়ান কিম্বা ফিমেইল হতেন, তাহলেও উনার কথা অতোটা গুরুত্ব বহন করতো না।
তো এই ভদ্রলোককে যখন বিবিসি হার্ড টক এ বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের চরম দূরবস্থা এবং এর প্রতিকারে জাতিসংঘের চরম ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে প্রশ্ন করা হলো, তখন নেহায়েত আত্মরক্ষার্থে তিনি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে বাংলাদেশের রেফারেন্স টেনে আনলেন।
জুলাই বিপ্লবের সময় উনারা নাকি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে ‘বিশাল’ অবদান রেখেছেন।
উনারা নাকি সেনাবাহিনীকে চোখ রাঙ্গিয়ে বলেছেন, ছাত্রজনতার উপর নিপীড়ন বন্ধ না করলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশী সেনাদের অংশগ্রহনের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। আর তাতেই নাকি ভয় পেয়ে সেনাবাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘনের পথ থেকে সরে এসেছে। আর তাতেই হাসিনার পতন হয়েছে। বাংলাদেশ অর্জন করেছে দ্বিতীয় স্বাধীনতা।
বাহ, বাহ, চমৎকার গল্প। নতুন মাস্টার মাইন্ড এর সন্ধান পাওয়া গেলো দেখছি। মাহফুজদের আর ফাকা মাঠে গোল দেবার সুযোগ থাকলো না।
ভাবছি, এই গল্পটা দাড় করাতে ফলকার তুর্করা সাতটা মাস সময় নিলেন কেন? ছোট্ট একটা স্ক্রিপ্ট! এটা দাঁড় করাতে এতো সময় লাগে! নাকি মোক্ষম সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন? দুর্বল স্ক্রিপ্ট তো। ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ না থাকলে চালিয়ে দিতে সমস্যা হয়।
জুলাইয়ে কাকে সতর্ক করেছিলেন মিস্টার তুর্ক? আমরা কেউ জানলাম না। ছাত্ররা জানলো না, মুরুব্বীরা জানলো না, সৈনিকরা জানলো না, অফিসাররা জানলো না, আমরা ভেটেরানরা জানলাম না। এই তথাকথিত সতর্কবার্তার ছিটেফোটা অস্তিত্বের কথাও তো শোনা যায়নি এই সাত আটটি মাস। যে সতর্কবার্তার অস্তিত্বই অনুভব করেনি কেউ, তার প্রভাব কিভাবে তৈরী হবে?
এমন একটি গল্প সাজিয়ে সেনাসদস্যদের দেশপ্রেম এবং ছাত্রজনতার সাথে তাদের একাত্নতা ঘোষণার নিঃস্বার্থ, ঐকান্তিক মানসিকতাকে আন্ডারমাইন করা হয়েছে।
ফলকার তুর্ক এর এই বক্তব্য নিন্দনীয় এবং পরিত্যাজ্য।
আমি অবাক হচ্ছি এই ভেবে যে তিনি এইসময়ে হঠাত এরকম বিতর্কিত একটি মন্তব্য বা বক্তব্য কেন দিলেন। এই মানুষগুলো তো মুখ ফসকে কিছু বলে না। এদের প্রতিটি কথার পেছনে গভীর উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনা থাকে।
গত বেশ কিছুদিন ধরে সোস্যাল মিডিয়াতে সেনাবাহিনীকে ঘিরে নানা ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। প্রতি দিন, প্রতিটা দিন উদ্ভট কিছু না কিছু একটা গুজব থাকছেই সেনাবাহিনীকে ঘিরে। সাধারন মানুষ, যাদের এসব গুজব যাচাই বাছাই করার কোন সুযোগ নেই, তারা এসব দেখে সেনাবাহিনী নিয়ে নানা ধরনের জল্পনা কল্পনা করে যাচ্ছেন। এসব জল্পনা কল্পনার কোনটিই দেশের জন্য, সরকারের জন্য বা সেনাবাহিনীর জন্য মঙ্গলজনক নয়। আর এসব জল্পনা কল্পনাতেই নতুন করে ঘি ঢাললেন জনাব ফলকার তুর্ক। আমি বিষয়টিকে মোটেই সহজভাবে নিতে পারছি না।
যারা দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করে লাভবান হতে চায়, তাদের সাথে ফলকার তুর্ক এর এই বক্তব্যের কোন একটা যোগাসাজশ থাকতেও পারে।
সাদা চামড়ার ইউরোপীয়ান মেইল জাতিসংঘের উচ্চপদে থেকে কোন বিবৃতি দিলেই সেটা সত্যি হয়ে যায়না।
উপনিবেশিক ভৃত্য মানসিকতা থেকে বেড়িয়ে এসে জুলাইয়ের বিপ্লবী পটভূমিতে সত্যের অনুসন্ধান করি। গুজবে বিভ্রান্ত না হই।
বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতার কৃতিত্বটুকু নিজেদেরই থাক। অন্য কারও না হোক।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. আবদুল্লাহ আল ইউসুফ
সংগৃহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *