অনলাইন ডেস্ক:
বাংলাদেশের নবনিযুক্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণের ১৬ ঘণ্টার মধ্যেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, খাদ্য, ভূমি মন্ত্রণালয়সহ মোট ২৭টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সেইসাথে ১৩টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আরো ১৩ জন উপদেষ্টার মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে।
এরমধ্যে মো. তৌহিদ হোসেন পেয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত, তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন।
এরপর ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার নিযুক্ত হন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন এম সাখাওয়াত হোসেন। অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তা ২০০৭ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিই পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর তিনি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে নির্বাচন বিশ্লেষক হিসেবে তার লেখা বা উপস্থিতি দেখা যায়। সেইসাথে ভূ-রাজনীতি প্রসঙ্গেও তার প্রচুর কলাম রয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি ২০০৫ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক এবং রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।
মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আদিলুর রহমান খান পেয়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
মি. খানকে ২০১৩ সালে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার অভিযানে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে ‘বিভ্রান্তি ছড়ানোর’ অভিযোগে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
পরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারার মামলায় তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত। তবে মি. খান এখন জামিনে মুক্ত আছেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসান আরিফ পেয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
তিনি ২০০৭ সালে ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলেন।
তারও আগে ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে সরব সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান পেয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। তিনি বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার প্রধান নির্বাহী এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী।
পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ‘রামোন ম্যাগসেসে’ থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমীন এস মুরশিদ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।
নির্বাচন বিশ্লেষক ছাড়াও তিনি ভোটাধিকার ও বাক-স্বাধীনতার বিষয়ে বেশ আগে থেকেই সরব।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন উন্নয়ন ও মানবাধিকারকর্মী ফরিদা আখতার। তিনি বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা’র (উবিনীগ) নির্বাহী পরিচালক।
তিনি একাধারে একজন মানবাধিকার, সেইসাথে বিকল্প কৃষি উৎপাদন ও গবেষণা এবং নারী অধিকার বিষয়ক একজন কর্মী।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমীর এবং ইসলামী চিন্তাবিদ আ ফ ম খালিদ হোসেন পেয়েছেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষা উপদেষ্টা ছিলেন। সেইসাথে ওমরগণি এমইএস কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের খণ্ডকালীন অধ্যাপকও ছিলেন।
গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরজাহান বেগম স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।
তিনি ২০১০ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন। এর আগে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. নাহিদ ইসলাম ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।
তারা দু’জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। নাহিদ ইসলাম সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। অন্যদিকে, আসিফ মাহমুদ ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।
গত জুনে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই তারা দুজন এর সমন্বয়ক হিসেবে নেতৃত্বে দিয়ে আসছে।
এদিকে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, শিক্ষা, সড়ক পরিবহন ও সেতু, খাদ্য, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত, ভূমি, বস্ত্র ও পাট, কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, রেলপথ, জনপ্রশাসন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, নৌ-পরিবহন, পানি সম্পদ, মহিলা ও শিশু, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ, তথ্য ও সম্প্রচার, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, বাণিজ্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান, সংস্কৃতি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন, মুক্তিযুদ্ধ, পার্বত্য চট্টগ্রাম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা- এই ২৭টি মন্ত্রণালয় দেখবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।
তথ্য সূত্র: বিবিসি নিউজ বাংলা