আব্দুস সালাম ও হুমায়ুন কবির জৈনসার থেকে ফিরে:
সিরাজদিখান উপজেলায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক নাবলিকা মেয়ের সাথে নাবালক ছেলের প্রেম হয়। প্রেমের সূত্রপাতে ঈদের পরে মেয়ের বাড়িতে প্রেমিকার ডাকে সারা দিতে ছেলে মেয়ের বাড়িতে যায়। ছেলের মা ও নানীর অভিযোগ চুরির সন্দেহে পিটিয়ে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে পুলিশে দেয় মেয়ের বাবা। পরবর্তীতে সেই চুরির অভিযোগ প্রত্যাখান করে মেয়ের প্রেমিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা ঠুকে দেন মেয়ের বাবা। নাবালক প্রেমিক আয়নাল এখন শ্রীঘরে রয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ১২ই এপ্রিল মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান জৈনসার ইউনয়নের কাঠালতলী গ্রামে। নাবালেগ প্রেমিক আয়নালকে চোরের অপবাদে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন লোভী প্রেমিকার বাবা। মেয়ের সাথে সন্ধায় দেখা করতে আসে একই ইউনিয়নের কাঠালতলী গ্রামের আয়নাল (১৭) পিতা আল আমিন শেখ। আয়নাল একজন দিনমজুরে নাবালক। বয়স বাড়িয়ে বয়স ১৯ বছর দিয়ে প্রথমে চুরির অভিযোগে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। পরে থানার পুলিশ এবং মেয়ের বাবা মিলে ধর্ষণের মামলা সাজিয়ে জেলের ঘানি টানাচ্ছেন আয়নাল কে।
ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায় আয়নাল প্রথম আটক হয় ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে চোর ধরে আটক হিসেবে। পরবর্তীতে ব্যাটারি চালিত রিক্সা বিক্রি করে ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) টাকার বিনিময় ছেড়ে দেয় পুলিশ। দ্বিতীয়বার আটক হয় ১৩ ই এপ্রিল দুপুরের পরে।
থানার পুলিশ, দালাল মোয়জ্জেম মেম্বার এবং সাজানো ভিকটিমের বাবা রুবেলকে দিয়ে ধর্ষনের মামলা করার পরে থানায় ঢেকে আনেন আগের মোচলেকায় সহি সম্পাদনের অজুহাতে। অপর দিকে ভবানিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে ভিকটিম সাজিয়ে ধর্ষণের একটি মামলা করায় এলাকায় মানুষের মাঝে পুলিশ ও দালালদের বিষয় ঘৃণার ঝড় বইছে। সন্ধা সাড়ে সাতটা হতে সাড়ে এগারোটায় আসামী আয়নাল মেয়ের সাথে কাটানোর পরেই প্রথম দফায় চোর পরের দিন ধর্ষণের আসামী? অনেকের মনে নানাবিধ প্রশ্ন উঠছে সচেতন মহলে।
আয়নালের নানী কাজল রেখা (৬৫) ঘটনার বিবরণ বলতে গিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার নাতিকে প্রচুর পরিমানে মারপিট করে চুরির অভিযোগে থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। আমি এলাকার শামিম সিকদারের মাধম্যে আমার মেয়ের জামাইর এক মাত্র মিশুকটি বিক্রি করে ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) টাকার বিনিমযে থানা হতে ছাড়িয়ে আনি। পরে আবার ১৩ এপ্রিল দুপুরের পরে একটি সই দেয়ার নাম করে ধর্ষণের মামলায় জেলে দিয়ে দেয় আমার নাতিকে।
শামিম শিকদার ছাড়া সমজোতায় অন্য কেউ ছিলো কি না ? এমন প্রশ্নের উত্তরে কাজল রেখা বলেন এ্ই এলাকার ওয়ার্ড মেম্বার মোয়াজ্জেম আমার নাতীকে মামলায় ছাড়িয়ে আনবেন বলে প্রথমে এক লক্ষ টাকা চাইছেন। আমরা মোয়াজ্জেম মেম্বারের কথা রাখতে পারি নাই এবং ত্রিশ হাজার টাকায় ছাড়িয়ে এনেও জেল হতে রক্ষা করতে পারি নাই। মোয়াজ্জেম এমনও বলেছেন এখন আর কিছু করার নেই দেড় লক্ষ টাকাও চেয়েছেন একটা সময়ে। আমার নাতীকে এমন মার দিছে যা ভাষায় বলতে পারছি না বলে জানায় কাজল রেখা।
এ বিষয় মেয়ের বাবা রুবেল শেখ বলেন, আমার মেয়ের ধর্ষনের আসামীকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় আবার ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকার মিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছিলে পুলিশ। ১৩ই এপ্রিল আবার মামলা করলে পুলিশই ধর্ষককে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে। রুবেল শেখই বলেন ধর্ষকের বাবার অটো বিক্রি করে প্রথমে ছাড়িয়ে নেয়। প্রথমেই কি ধর্ষনের মামলা ছিলো? রুবেল শেখ বলেন জ্বি হ্যা ধর্ষণের মামলাই করা হয়েছে।
জৈনসার ইউনিয়নের তিন নং ওয়ার্ড সদস্য মোয়াজ্জেম কে মোবাইল ফোনে মামলার বিষয় কল দিলে তিনি সব এড়িয়ে যান। মোয়াজ্জেম আরো বলেন আমি মাঝে মাঝে থানায় যাই তবে কোন দালালি কাজে নয়। বাদী বিবাদী উভয়কে আমি চিনি।
এ এস আই মাইনুল সাক্ষাতে বলেন আমি ৯৯৯ এ কল পেয়ে ঘটনা স্থলে গিয়ে আয়নালকে থানায় নিয়ে আসি গভীর রাতে। পরের দিন আয়নালকে তার নানির জিম্মায় ছেড়ে দেই। আবার ঐ দিনই মেয়ের বাবা রুবেল শেখ মেয়ের বিষয়ে ধর্ষণের মামলা করেন। আমাদের সাথে কোন অনৈতিক লেন দেন ছিলো না। কেউ বললে তা মিথ্যা। অন্য যা কিছু আছে সব ওসি স্যারে জানেন বলে জানান এ এস আই মাইনুল।
এ বিষয় সিরাজদিখান থানার তদন্ত ওসি মোক্তার হোসেন জানান, আসলে মেয়ের বাবা একজন ক্রিমিনাল। শিশু মেয়ের বিষয় ধর্ষণের মামলা করাটা ঠিক হয় নাই। ৯৯৯ এ ফোন করে মেয়ের বাবা চোর ধরে আটকিয়ে রেখেছে জানান এবং সেই অভিযোগে আয়নালকে ধরে আনা হয়েছিল। মেয়ের বাবাই সকালে ফোন দিয়ে জানিয়েছে সে অভিযোগ প্রত্যাহার করেছে এবং আয়নালকে ছেড়ে দেয়ার জন্য। সেই মেয়ের বাবাই আবার পরের দিন ধর্ষণের অভিযোগ এনে থানায় মামলা করেছেন। মেয়ের বাবা কেন এমন করেছে তা বুজতে পারছিনা। ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) টাকার বিষয়টি সত্য না। কেউ যদি এই ধরনের কথা তোলে তা ভিত্তিহীন। আর থানার ওসি সাহেবের বিষয় মিথ্যা বলতে পারে।
অসহায় নেহাত গরীব আয়নালের মা জানান আমার ছেলেকে চুরির অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে থানার পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়। পরবর্তীতে আমার স্বামীর একমাত্র আয়ের উৎস মিশুকটি বিক্রি করে সর্বমোট ৩০হাজার টাকা দিয়ে ছেলেকে থানা থেকে ছাড়িয়ে এনেছি। পরবর্তীতে পুলিশ মিথ্যা কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। এ বিষয়টির সুষ্ঠু বিচার চাই।