শ্রীনগরে অর্থের বিনিময় মিথ্যা মামলা॥ বাদীর মামলা করেননি বলে জবানবন্দি

Spread the love

স্টাফ রিপোর্টার
শ্রীনগর থানার মামলা নং- ৮(১০)২৪, জি.আর নং- ২৬৬/২৪ দায়েরের বিরুদ্ধে বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করলেন পুলিশ সুপার। এই মিথ্যা মামলার মূল ঘটফাদার মেজবাহ ইদ্দন খান মেগনেট। বাদী মোঃ লতিফ বেপারী (৫০) জেলা পুলিশ সুপার বরাবর স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। এই মামলা সম্পর্কে তিনি জানেনই না। কাদেরকে আসামী করা হয়েছে তাও তিনি জানেন না।

ঘটনাটি ঘটেছে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর মধ্য বাঘড়া, ১নং ওয়াডে ১২ অক্টোবর রাত অনুমান ৯.৩০ ঘটিকার সময়। বাদীর ছেলে নাহিদ বেপারী (২২), তার বন্ধু সাখাওয়াত (২৬), রনি গাছি (২৫), আপন বেপারী (২৫)। বিশ^স্তসূত্র জানিয়েছে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে নাহিদ বেপারীকে গুলি করে হত্যা করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মার্ডার মামলা করার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, শ্রীনগর হাসপাতালে নাহিদ বেপারীকে নেয়ার পর বন্ধু সাখাওয়াতসহ সকলে আলোচনা করতে তিনি শুনেছেন সাখাওয়াতের হাতেই এই পিস্তলটি ছিল। নাড়া চাড়া করতে করতেই এই গুলি বের হয়ে নাহিদের পেটের উপরে গুলি লেগে গেছে। সাখাওয়াত (২৬) কে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলেই প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

৪ জন একসাথে ঘুরতে বের হয়ে শ্রীনগর থানাধীন মধ্য বাঘড়ার নদীর পাড়ে রাস্তার ধারে আব্দুল হকের কাঠের মাচার উপর বসে কথাবার্তা বলিতেছিল এবং মোবাইলে গেম খেলতেছিল ঐ সময়ে কে বা কারা কি জন্য বাদীর পুত্রকে গুলি করে। গুলি লেগে নাহিদ বেপারী গুরুতর আহত হলে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে ও তাহার বন্ধু সাখাওয়াত, আপন ও রনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স শ্রীনগর এ চিকিৎসার জন্য নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে রেফার করেন।

নাহিদ তার বাবা লতিফকে বলেন, আমাকে কে বা কারা গুলি করেছে আমি কিছুই দেখি নাই এবং আমার পুত্র একই বক্তব্য একজন পুলিশ অফিসারের নিকট প্রদান করেছে। একটা পক্ষের হয়ে ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার মজিবুর ও ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার নুরুজ্জামান ওসি ও দারোগার মাধ্যমে এই মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। এই মিথ্যা মামলায় আসামী করা হয় প্রবাসী ইমারত চৌকিদার (৩২), শওকত (২৪), সদ্য বিদেশ ফেরত সোহেল (৩৭) ও সোহাগ চান (৩২), নাজিম শেখ (২৯)সহ অজ্ঞাত ৪-৫জন।

বাদী জানান, নুরুজ্জামান মেম্বার শ্রীনগর থানায় নিয়ে গিয়ে অফিসার অব ইনচার্জের কক্ষে বসে গুলির বিষয় অবগত করার কথা বলে একটি লিখিত কাগজে সহি স্বাক্ষর নেন। উক্ত কাগজে কি লিখা আছে তা জানতে চাইলে বলে যে, আপনার ছেলে যে গুলি খেয়েছে এই মর্মে থানাকে অবগত করলেন।

বাদী মাছ ব্যবাসায়ী লতিফ বেপারী বলেন, মামলার আসামী আমি চিনি না, কখনো দেখি নাই এবং তাদের নামে আমি শ্রীনগর থানায় কোন প্রকার লিখিত অভিযোগ দায়ের করি নাই। আমি পড়ালেখা না জানায় এই সুযোগ নিয়া আমার অজ্ঞাতস্বরে কে বা কারা যোগসাজসী ভাবে উল্লেখিত মামলা দায়ের করেছে। এমন কি অফিসার অব ইনচার্জ শ্রীনগরকে আমি উল্লেখিত মামলার আসামীদের নাম বলি নাই এবং কে কি করেছে তাও বলি নাই। উল্লেখিত মামলায় ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারটি আমার না।

এ বিষয়ে ৪নং ওয়ার্ড সদস্য নুরুজ্জামান বলেন, আমার সাথে বাদী লতিফ বেপারীর দেখা থানার মাঠে, অন্য বিষয়ে কথা হইছে, তবে মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমার বিরুদ্ধে এই ধরনের কোন অপপ্রচার মিথ্যা ও বানোয়াট, মেজবাহউদ্দিন খান ম্যাগনেটে একটা সন্ত্রাসী, তার সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই। আমার বাড়ী ৪ নং ওয়ার্ডে হলেও ১ নং ওয়ার্ড অনেকের সাথেই ভালো মন্দ খোঁজ খবর নেই, এটা আমার স্বাভাবিক নিয়ম। লতিফ বেপারীর পুত্র গুলিবিদ্ধ আহত হয়েছে শুনেছি, থানায় মামলা হয়েছে আসামিদের নামে তা জানছি, আসামি আটক হবে, পুলিশ খুঁজতেছে। অপর মেম্বার মুজিবরকে তার সেল ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।

জেলা পুলিশ সুপার জানান, বাদীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যাকে তাকে বাদী করে নিরীহ মানুষদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। প্রকৃত আসামীদের গ্রেফতারে শ্রীনগর পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশের সাথে স্থানীয় কিছু দালাল এই ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়ছে।

আমলি আদলতের সিএসআই সিরাজুল ইসলাম জানান, ইফতি হাসান স্যারের হুকুমে মামলার আয়ুকে ফোন দিয়ে মামলার বিষয়ে জানিয়েছি। প্রকৃত আসামীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার আদেশ প্রদান করা হয়েছে। নিপরাধ লোকদের যেন হয়রানী করা না হয় সে বিষয়ে অবগতি করা হয়েছে। বাদীর দরখাস্ত নথিভূক্ত করে রাখা হয়েছে মামলার সাথে।

সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ইফতি হাসান ইমরান এই ঘটনায় প্রকৃত আসামীদের গ্রেফতার করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *