রুবেল ইসলাম তাহমিদ, লৌহজং
যুগের পর যুগ হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন পারাপার হতেন এই ঘাট দিয়ে। কিন্তু স্বপ্নের পদ্মাসেতুতে যান চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে হারিয়েছে ঘাটের চিরচেনা সেই রূপ। ফেরি ঘাট এলাকায় যানবাহনগুলো অলস পড়ে আছে।
স্পীটবোট ও লঞ্চ ঘাট, বাস টার্মিনালে নেই কোন যাত্রীদের পদচারনা। লঞ্চ চালক ও বাসের হেলপারের ডাকাডাকি। যানবাহন ও যাত্রী শূন্য ঘাটে নেই কোন কোলাহল।
শনিবার (৮ জানুয়ারী ২০২৩) সকালে শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, অলস পরে আছে।
এতোদিন পদ্মায় দাপিয়ে বেড়ানো স্পীট বোট, লঞ্চ ও ফেরি। ঢাকা-মাওয়া রুটে চলাচল করা বাসগুলো যেনো মরুভূমির বুকে পার্কিং করে রাখা হয়েছে। ফাঁকা পরে আছে সারি সারি খাবারের দোকান।
লঞ্চ ঘাটে নেই যাত্রীদের চাপ। নেই যাত্রীদের আনাগোনা। সারি সারি যানবাহন ফেরি আর লঞ্চের ভেঁপু শব্দ আর লোকজনের কোলাহলে মুখরিত শিমুলিয়া ঘাট যেন আজ বিরান ভূমি।
যুগের পর যুগ পদ্মায় চলাচল করা নৌযান গুলো বসে আছে বেকার কোন কোন যান ২০/২৫ দিন । লঞ্চ ও বোট চালকরা ঘাটে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও পাচ্ছে না কোন যাত্রীর দেখা। অলস সময় কাটছে তাদের।
ঘাট বন্ধ,গাড়ি নেই, নেই যাত্রী । সারি সারি খাবারের দোকানে ও নেই তেমন ভিড়-বাট্টা। যেন ক্লান্তিতে একটু ঝিমিয়ে নিচ্ছে।
সারি ধরে ঘাটে দাঁড়িয়ে দুলছে ঢেউ এর তালে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় খুশি ঘাট সংশ্লিষ্ট সকলেই।
শিমুলিয়া- বাংলাবাজার নৌ রুটের লঞ্চের মালিক আমিনুল ইসলাম জানান, গেল জুনে পদ্মা সেতু চালু হওয়াতে মনটা আনন্দে ভরে গেছে,আমরা অনেক খুশি। বহু বছর ধরে দক্ষিন বঙ্গের যাত্রীরা নানা ভোগান্তি নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়েছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরি পারাপার ও লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করতেন, সে ভোগান্তি এখন নেই।তবে আনন্দের পাশাপাশি আমারদের বোবা কান্নাও আছে, কেননা এখন ঘাটে যাত্রী নেই, সারাদিনে একটা টিপ দিতে পারছিনা। যে পরিমাণ যাত্রী হচ্ছে এতে তেলের টাকাও উঠছে না।
এতো বছর লঞ্চে যাত্রী পারাপার করেছি সেই মায়ায় এখনও ঘাটে আছি।
এদিকে সিবোট চালক রা বলেন, পদ্মাসেতু উদ্বোধনের আগের দিন ও ঘাট এলাকায় যাত্রী ছিলো। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পর এখন সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। সেতু চালু হওয়ার পর যাত্রীরা আর ঘাটে আসছে না।
বর্তমানে আমরা আমাদের জীবিকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। এ পথে পার হওয়া যাত্রীদের দুর্ভোগ নিজ চোখে দেখেছি। যিার ফলে পদ্মাসেতু চালু হওয়ায় খুশি হয়েছি।
তবে আমি সরকারের কাছে দাবি জানাই আমাদের জীবিকার যেনো কোনো ব্যবস্থা করে দেন।
শিমুলিয়া ঘাটের হোটেলের মালিক আশরাফ হোসেন জানান, আগে হোটেলে দিনরাত ইলিশ ভাজা, মাছ, মুরগি বিক্রি করতাম। এখন সারাদিনে টুকটাক বিকি কিনি করি। পদ্মাসেতু চালু হওয়াতে ঘাট এলাকায় দক্ষিন বঙ্গের কোন যাত্রী আসা যাওয়া করছেনা।
পদ্মাসেতু চালুর পর সেতু এলাকায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন ঘুরতে আসে। বহু অভিজাত খাবার হোটেল রয়েছে, দর্শনার্থীরা ছুটে আসছেন শুক্র, শনি বন্ধের দিন। কিন্তু আমরা এখন আগের মতো বিকি কিনি করতে পারছিনা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) শিমুলিয়া বন্দর কর্মকর্তারা জানান, সকাল থেকেই লঞ্চ-স্পিডবোট আগের নিয়মে যথানিয়মে চলাচল করছে তবে যাত্রী সংখ্যা অনেক কম।
২৬ জুন ভোর হতে পদ্মা সেতু জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার পরই পদ্মা সেতুর উপর দিয়েই দক্ষিন বঙ্গের মানুষ যাতায়াত করছেন।
১৯৮৬ সালে লৌহজং উপজেলার মাওয়ায় ফেরিঘাট স্থাপন করা হয়।
পদ্মা সেতু চালু হলো, এখন থেকে ঘাটের লঞ্চ ও স্পীটবোট গুলোকে অন্যত্র সরিয়ে বিভিন্ন রুটে চালুর করা হয়েছে। জাঁকজমকপূর্ণ ও ব্যস্ততম, এখন সুনসান নীরবতা ।
যুগের পর যুগ হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন পারাপার হতেন এই ঘাট দিয়ে।সেতুতে যান চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে হারিয়েছে ঘাটের চিরচেনা সেই রূপ।