মুন্সীগঞ্জে মুফতী সরোয়ারের বিরুদ্ধে মহিলা মাদ্রাসার অন্তরালে ধর্ষণ, ঘুষ, দুর্নীতির অভিযোগে মানবববন্ধন

Spread the love

আব্দুস সালাম, হুমায়ুন কবির
মুন্সীগঞ্জ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাষ্টার ট্রেইনার ওলামালীগের সাধারণ সম্পাদক মুফতি সরওয়ার হোসাইনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিজ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উপর শারিরীক অত্যাচারের অভিযোগ এনে তাকে চাকরিচ্যুত ও শাস্তির দাবিতে মানবববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন অধীন মসজিদ ভিত্তিক গণশিক্ষা স্কুলের মুন্সীগঞ্জের শিক্ষক, কেয়ারটেকার ও সচেতন ইমাম সমাজ’ এর ব্যানের ঘন্টাব্যাপী এই কর্মসূচি পালিত হয়। এর আগে একই দাবিতে গত ৩ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপিও দেয়া হয়।

জেলায় নির্মিত মডেল মসজিদগুলোতে ইমাম নিয়োগের নামে আড়াই লক্ষ টাকা ও মুয়াজ্জিন নিয়োগের নামে এক লক্ষ টাকা করে অনেকের কাছ থেকে নিয়ে এখনো সেই টাকা ফেরত দেননি। মুন্সীগঞ্জ কাটাখালি বাজারে ‘সুফিয়া নাহার’ নামে তার একটি মহিলা মাদরাসা রয়েছে। উক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য ইমাম সাহেবদের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক টাকা কালেকশন করানো হয় এবং সেই টাকা নিজে আত্মসাৎ করেন। মাদরাসার বার্ষিক খতমে বোখারীর অনুষ্ঠানের জন্য প্রতি ইমামকে সর্বনিম্ন এক থেকে ৩ হাজার টাকা বাধ্যতামূলক প্রদান করতে হয়। এসকল কাজ দলীয় ক্ষমতা ও হুমকির মাধ্যমে তিনি বাস্তবায়ন করেন। কেউ কিছু বললে কেন্দ্র কেটে দেওয়ার হুমকি এবং পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হয়। কেয়ারটেকার নিয়োগের ক্ষেত্রেও ঘুষ নিয়ে সার্কুলার বহির্ভুত লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যার লিখিত অভিযোগ জেলা প্রশাসক বরাবর দিলেও সে তা লোক মারফত সরিয়ে ফেলে।

মানববন্ধনকারীরা অভিযোগ করে বলেন, মুফতি সরওয়ার গত ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগ আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন মুন্সীগঞ্জকে ইমাম ও জনগণের উপর জুলুম, শোষণ ও অন্যায়ের একটি প্রতিষ্ঠানে রুপান্তর করেছিলেন। জেলায় মোট ৮২০জন ইমাম গণশিক্ষার সাথে যুক্ত। ধর্ষক মুফতি সরওয়ার আলেম-ওলামা ও ইমাম সাহেবদেরকে গণশিক্ষার কেন্দ্র দেওয়ার জন্য প্রতি কেন্দ্র বাবদ সর্বনিম্ন দশ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছেন। পরবর্তীতে কেন্দ্র নবায়নের নাম করে ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন।

প্রতি রমজানের ঈদে ইমামদের যাকাত কালেকশনের জন্য বাধ্য করে ১ হাজার থেকে ১০ হাজার বা তার চেয়েও অধিক টাকা কালেকশন করে দিতে বাধ্য করেছেন। কোরবানির ঈদেও পশুর চামড়ার মূল্য বাবদ ইমামগণ থেকে সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা বাধ্যতামূলক নেওয়া হয়েছে।

তারা আরো বলেন, মুন্সীগঞ্জ কাটাখালি বাজারে সুফিয়া নাহার মহিলা মাদরাসা নামে তার যে মহিলা মাদরাসাটি রয়েছে, যা ইতিপূর্বে মুন্সীগঞ্জ সদর বোগদাদিয়া প্লাজার ৩য় ফ্লোর ভাড়া নিয়ে ‘লাল মিয়া আয়াতুল নেসা মহিলা মাদরাসা’ নামে পরিচালনা করতেন এই সরোয়ার। তিনি এই প্রতিষ্ঠানে অনেক ছাত্রীর সাথে অনৈতিক কার্যক্রম তথা জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছেন এবং অনেক অভিভাবককে অনৈতিক কাজের প্রস্তাব করেছেন। কোন মেয়ে বা অভিভাবক যেন এ বিষয়ে মুখ খুলতে সাহস না পায়, সে জন্য তাদেরকে দলীয় গুন্ডা ও পুলিশ দিয়ে হুমকি দেওয়া হতো। এভাবে সে ধর্ষণের মাধ্যমে অনেক মেয়ের জীবন ধ্বংস করেছেন। যার অভিযোগ কিংবা মামলা করাও অভিভাবকদের পক্ষে সম্ভব হয়নি, প্রত্যেক অভিভাবক এ বিষয়ে মানসিকভাবে কষ্টে ভুগছেন যদি এই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা না হয় তাহলে সে আরও অনেক মেয়ের জীবন ধ্বংস করবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।

মানববন্ধন করতে আসা গণশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইমামগন দাবী করেছেন ধর্ষক মুফতী সারোয়ারকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চাকুরি হতে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করে আইনের আওতায় এনে রিমান্ডে নিয়ে তার সকল অপকর্মের শাস্তি প্রদান করা এবং তার মাদরাসা বন্ধ করার জন্য সকল প্রকার পদক্ষেপ নেওয়ারও জোর দাবী জানান। যদি দ্রুত স্থায়ী বরখাস্ত করে গ্রেফতার করা না হয়, তবে তার বিরুদ্ধে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *