সুমন ইসলাম:
মুন্সীগঞ্জের চরাঞ্চলের দুটি গ্রাম থেকে দীর্ঘবছর ধরে বিতারিত বিএনপির প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মী ও তাদের পরিবার এখনো নিজ বাড়িঘরে উঠতে পারছেনা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের মাকহাটি ও মহেষপুর নামে ওই দুটি গ্রামের চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী, একাধিক মামলার আসামী ও যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসী ইউসুফ ফকির,পাভেল দেওয়ান,জাহাঙ্গীর সরকার, ফয়সাল সরকার গংদের হুমকির ভয়ে বিতারিত বিএনপির দেড় শতাধিক নেতাকর্মী এখনও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ -–গাজীপুর ও মুন্সীগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত পাঁচ আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র- জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকার পতিত হওয়ার পরও মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের যুবলীগের সন্ত্রাসীরা পুরনো সশস্ত্র প্রভাব বিস্তার করে বহাল তবিয়তে এলাকায় অবস্থান করছেন।আর তাদের এই বহাল তবিয়তে অবস্থানের নেপথ্যে রয়েছে মাদক ও অস্ত্রের প্রভাব। যুবলীগ সন্ত্রাসী ইউসুফ ফকির,পাভেল দেওয়ান,জাহাঙ্গীর সরকার গং গত ৪ আগষ্ট মুন্সীগঞ্জ শহরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের উপর হামলা চালিয়ে ছিলো বলেও অভিযোগ রয়েছে। সেদিন আন্দোলনরত জনতা রিয়াজুল ফরাজীসহ ৩জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। সেই হত্যা মামলায় যুবলীগ সন্ত্রাসী ইউসুফ ফকিরসহ গংদের আসামী করা হলেও রহস্যজনকভাবে তারা মাকহাটি ও মহেষপুর গ্রামে দিব্যি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন! মুন্সীগঞ্জের পুলিশ প্রশাসন এই সন্ত্রাসীদের এখনো গ্রেফতার করছেনা কোন রহস্যজনক কারণে তা ওই দুই গ্রামবাসীর মনে এ নিয়ে চরমভাবে সন্দেহ তৈরী করেছে।
এদিকে গত ৪ আগষ্ট মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের দিন দুপুরের দিকে মাকহাটি ও মহেষপুর দুটি গ্রামের বিএনপি নেতাদের দশ- পনেরোটি বাড়িঘরে সশস্ত্র হামালা চালায় এবং ভাংচুর করে এই যুবলীগ সন্ত্রাসী ইউসুফ ফকিরসহ গংরা। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে পুলিশের খাতায়। র্যাবের হাতে র্গ্রেফতার হয়েছিল বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেট মাদকদ্রব্যসহ।
জানা গেছে,২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় গ্রহণের পর মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের মাকহাটি ও মহেষপুর গ্রাম দুটির দেড় শতাধিক বিএনপির নেতাকর্মীর ওপর নির্মম অত্যাচার নিপীড়ন চালায় যুবলীগ সন্ত্রাসী ইউসুফ ফকিরসহ গংরা। এমনকি তাদের আলু রোপন করা জমিও দখল করে নেওয়া হয়। এক পর্যায়ে বিভিন্নভাবে ওই বিএনপির নেতা কর্মীদেরকে গ্রাম থেকে বিতারিত করা হয়। দাবীকৃত মোটা অঙ্কের চাঁদা দিয়েও নিজ বাড়িঘরে থাকতে পারেননি বিএনপির নেতাকর্মীরা। অস্ত্র যার শক্তি তার’ এই ডায়ালগ দিয়ে পুরো মাকহাটি ও মহেষপুর গ্রামে রামরাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছে যুবলীগ সন্ত্রাসী ইউসুফ ফকিরসহ গংরা।
এদিকে স্থানীয় বিএনপি নেতা মোস্তফা সৈয়াল,শাহ আলম হাওলাদার,সফিকুল দেওয়ান এ বিষয়ে বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে মাকহাটি ও মহেষপুর গ্রাম দুটির শতাধিক মানুষ নিজ বাড়িঘর থেকে বিতারিত। কারণ একটাই আমরা বিএনপি করি। আমরা এখনো গ্রামে উঠতে পারছিনা। পরিবার নিয়ে বাড়িঘরে ঢুকতে পারছিনা। মাকহাটি ও মহেষপুর গ্রামে এখনো স্বদর্পে যুবলীগ সন্ত্রাসী ইউসুফ ফকির,পাভেল দেওয়ান,জাহাঙ্গীর সরকার গংরা সশস্ত্র অবস্থান করছে। তারা প্রতিদিনই প্রকাশ্যে মহড়া দিচ্ছে।
তাদের সঙ্গে আশ্রয়ে রয়েছে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নসহ পাশ্ববর্তী ৪/৫টি ইউনিয়নের ছাত্রলীগ,যুবলীগ সন্ত্রাসীরা। গ্রাম দুটিতে তাদের সশস্ত্র অবস্থানের কারণে বিএনপি নেতাকর্মীরা ভয়ে আতঙ্কিত। এ জন্য তারা নিজেদের গ্রামে বাড়িঘরে উঠতে সাহস পাচ্ছেনা। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরেও কোন রহস্যজনক কারণে চিহিৃত এই সন্ত্রাসীদের এখনো গ্রেফতার করছেনা পুলিশ এ নিয়ে তা ওই দুই গ্রামবাসী মানুষদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা সন্দেহ এবং উৎকণ্ঠা।
অপরদিকে আওয়ামীলীগের নির্যাতনের শিকার মুন্সীগঞ্জ সদর থানা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মো: আতিকুল ইসলাম বলেন, ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। দেশের মানুষ স্ততি ফিরে পেয়েছে। আমার কাছে বোধগম্য হয়না! কিভাবে চিহিৃত যুবলীগ সন্ত্রাসী ইউসুফ ফকির,পাভেল দেওয়ান,জাহাঙ্গীর সরকার গংরা সশস্ত্র অবস্থান করছে গ্রামে? তিনি বলেন, কোন না কোনো রহস্যজনক কারণ তো রয়েছে। আমরা যারা বিএনপি করি দীর্ঘবছর নিজেদের গ্রাম ছাড়া,বাড়িঘর ছাড়া।
তিনি আরো বলেন, এমন কোনো নির্যাতন নেই তারা আমাদের ওপর করেনি। আমাদের সঙ্গে সর্ব প্রকার নির্যাতন নিপীড়ন চালানো হয়েছে। জমিতে আলু রোপন পর্যন্ত করতে দেয়নি তারা। মা,বাপের ভিটেমাটি, বাড়িঘর, ফসলি জমি পর্যন্ত তারা দখল করে নিয়েছে। ১০ বছর ধরে বিভিন্ন এলাকায় এখনো অসহায়ের মত থাকতে হচ্ছে।
দীর্ঘদিন গ্রাম থেকে বিতারিত এই ছাত্রদল নেতা মো: আতিকুল ইসলাম আরো বলেন, আমরা নিজেদের গ্রামে ফিরতে চাই,বাড়িতে ফিরতে চাই। মুন্সীগঞ্জের পুলিশ প্রশাসন যেনো অতি দ্রুত এই সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করেন। এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে দেন।
এদিকে মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মো: আসলাম খান এই বিষয়ে বলেন, মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের সন্ত্রাসীরা অবস্থান করছে তা আমার জানা নেই।পুরো বিষয়টির খোঁজখবর নেওয়া হবে। সন্ত্রাসী যেই হোক তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে।