ঢাকা – মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে গত ১ বছরে ৭২ দূর্ঘটনায় নিহত ৫১ আহত শতাধিক

Spread the love

স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা – মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে গতিসীমার নির্দেশনা না মানা , বেপরোয়া গতিতে গাড়ী চালানো , ওভারটেকিং করা , ফিটনেসহীন গাড়ী চলাচল , বৈরী আবহাওয়ায় কিংবা ঘন কুয়াশার সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ সীমার মধ্যে রেখে চলাচল না করায় , অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালকের গাড়ী চালানো , পুলিশের দায়িত্বহীনতা সহ এক্সপ্রেসওয়েতে চালকের গাড়ী চালানোর দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে। রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। ঢাকা – মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে যেন মৃত্যুকুপে পরিণত হয়েছে। দুর্ঘটনা রোধে এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারি কোন পদক্ষেপই কাজে আসছে না।দূতগতির গাড়ী সনাক্ত এবং ট্রাফিক আইন অমান্যকারীকে সনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন সহ কিছু ব্যাবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন। গত এক বছরে ৭২ টি সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণহানী হয়েছে ৫১ জনের এবং আহতের সংখ্যা শতাধিক । গত ১৫ দিনেই ৪ টি দূর্ঘটনায় একই পরিবারের ৪ জন সহ ১২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।

চার লেনের সার্ভিস লেন সহ আট লেনের ঢাকা – মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে ২০২০ সালে চালু হয়। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পর যানবাহনের জন্য খুলে দিলে প্রথম কয়েকদিনেই প্রাণ যায় ৩ মোটর চালক আরোহীর। পরে মটর সাইকেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় । সহজ ও নিরাপদ সড়ক যাতায়াত নিশ্চিত করতে আট লেনের এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হলেও শুরু থেকে যানবাহনের বেপরোয়া গতির কারণে একের পর এক সড়ক দূর্ঘটনায় যাত্রীদের প্রাণ ঝরছে।

শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ – পরিচালক দেওয়ান আজাদ হোসেন বাসসকে জানান , ৪ জানুয়ারী পর্যন্ত গত এক বছরে ঢাকা – মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ৭২ টি সড়ক দূঘটনায় ঘটনাস্থলে এবং বিভিন্ন হাসপাতালে ৫১ জনের প্রানহানী ঘটে এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।

সার্ভিস লেনে গাড়ি চলাচলের জন্য সড়ক বিভাগ গতিসীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে এক্সপ্রেসওয়েতে কার ,বাস , মিনিবাস ও মাইক্রোবাসের সর্ব্বোচ্চ গতি ঘন্টায় ৮০ কিলোমিটার ট্রাক , কাভার্ডভ্যান , মিনিট্রাক সহ সকল মালবাহী যানের সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ঘন্টায় ৫০ কিলোমিটার এবং মটর সাইকেলের সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার। কিন্তু দূর পাল্লার যাত্রীবাহী বাস ট্রাকের চালক সে নীতিমালা মানছেন না। পুলিশ বিভিন্ন স্থানে চেকপোষ্ট বসিয়ে , মাইকিং করে এবং লিফলেট বিতরন করেও ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতিতে সফল হচ্ছেন না। গাড়ীর চালক পুলিশের সামনে গতি কমালেও পরে আবার গতি বাড়িয়ে দেয়।পুলিশের স্পিড গানে দেখা যায় যাত্রীবাহী বাস ট্রাকের গতি ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার থাকে। বৈরী আবহাওয়ায় কিংবা ঘন কুয়াশার সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ বা গতি নিয়ন্ত্রন সীমার মধ্যে রেখে চলাচল করতে বলা হলেও তা মানা হচ্ছে না।

হাসাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাদির জিলানি বাসসকে জানান , ঘন কুয়াশার কারণে গত ১৫ দিনে ৪ টি সড়ক দূর্ঘটনায় ১২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এর মধ্যে গত ২৭ ডিসেম্বর ধলেশ্বরী টোলপ্লাজায় একাধিক গাড়ীর পরপর পিছন দিক থেকে ধাক্কায় একই পরিবারের ৪ জন সহ ৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। গত ৩ জানুয়ারী দুইটি পৃথক দূর্ঘটনায় ৪ জনের প্রাণহানী ঘটে। তিনি আরো জানান , গাড়ীর চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ফটোকপি থাকায় তা পরীক্ষা করতে অনেক সময় লাগে। ফলে রাস্তার সব গাড়ী চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করা যায় না। বিআরটিএ দুততম সময়ে চালককে মূল লাইসেন্স দিলে স্বল্প সময়ে লাইসেন্স পরীক্ষা করা যায়। টোল আদায়ের সময় গাড়ীর ফিটনেস সার্টিফিকেট , চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ অন্যান্য কাগজ পত্র পরীক্ষা করলে গাড়ীর চালক এবং মালিক সচেতন হবে। ট্রাফিক আইন অমান্য কারীদের বিরুদ্ধে গত এক বছরে ৪ শতাধিক মামলা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায় হাইওয়েতে পর্যাপ্ত আলো নেই। রাস্তার অনেক লাইট নষ্ট ।পথচারী ইচ্ছে মতো রাস্তা পার হচ্ছে। যত্রতত্র গাড়ীতে যাত্রী ওঠা নামা করছে। টোল প্লাজায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের সিসি ক্যামেরা থাকলেও পুলিশ এ ক্যামেরার সুবিধা নিতে পারছে না। হাইওয়ে পুলিশ রাস্তায় সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করতে পারলে কোন গাড়ী ট্রাফিক আইন অমান্য করলে সাথে সাথে নিয়ন্ত্রন কক্ষ থেকে পরবর্তী পুলিশ ষ্টেশনে তথ্য পাঠিয়ে গাড়ী আটকানো যাবে।এতে রাস্তায় শৃঙ্খলা অনেকটা ফিরে আসবে এবং দূর্ঘটনা কমে যাবে।হাইওয়ে পুলিশ যানবাহন স্বল্পতার কারণে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারছে না।

প্রধান শিক্ষক মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন , প্রায় ২৯.২ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা – মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে অধিকাংশ গাড়ী চালকের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা না থাকায় চলন্ত গাড়ী নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারে না। ফলে প্রায়ই ভয়াবহ দূর্ঘটনা ঘটছে। গত ১৫ দিনেই বেপরোয়া গতির কারণে চালক নিয়ন্ত্রন হারিয়ে দাড়িয়ে থাকা গাড়ীকে পিছন থেকে ধাক্কা দিলে ৪ টি দূর্ঘটনায় একই পরিবারের ৪ জন সহ ১২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। গাড়ী চালকের লাইসেন্স এবং এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ী চালানোর দক্ষতার বিষয়টি কঠোর নজর দারিতে আনতে হবে। ঢাকা – মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা রোধে পুলিশ সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আরো দায়িত্বশীল ভ’মিকা পালন করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *