মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
মুন্সীগঞ্জে হত্যা মামলায় মো. সোহেল (৩৫) নামে এক আসামীর যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ডের রায় দিয়েছে আদলত। এ সময় নিহতের লাশ গুম করার ঘটনায় আসামীকে দোষি সাব্যস্ত করে আরো ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ০৬ (ছয়) মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের রায় ঘোষনা করেন। এ সময় একই মামলার অপর আসামী রিতা আক্তার @ ববিতার বিরুদ্ধে ঘটনার বিষয় প্রমানিত না হওয়ায় তাকে বে-কসুল খালাস দেওয়া হয়।
রবিবার (৩ আগষ্ট) বেলা ১১ টার দিকে মুন্সীগঞ্জ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক কাজী আবদুল হান্নান এ রায় দেন বলে নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতে বেঞ্চ সহকারী ( পেশকার) মোহাম্মদ হোসেন। আসামী সোহেল লক্ষীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার উত্তর চরপাতা গ্রামের মৃত- আয়াতুল্লাহর ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বাদীর ছোট বোন নিহত পলি আক্তার রিতা বিয়ের পূর্ব হতে এলোমেলো চলাফেরা করিত এবং মেসে থেকে ইচ্ছামত মোবাইলে কথাবার্তা বলাসহ ঘোরা-ফেরা করিত। বিয়ের পরেও সে ফোনে বিভিন্ন মানুষের সাথে আপত্তিজনক ভাবে কথাবার্তা বলতো। যাহার কারনে পলি আক্তারের খোঁজ খবর তেমন রাখতো না স্বজনরা। পলি আক্তার গত ১৫ মার্চ ১৮ইং তারিখে তার নিজ ভারাটিয়া বাড়ি ঢাকা হতে বাহির হয়ে আর বাড়িতে না ফেরায় তাকে খোজাখুজি করে নিহতের স্বজনরা। খোঁজা খুঁজির এক পর্যায়ে ২০১৮ সালের ২২মার্চ বাদীর ভগ্নিপতি নিহতের স্বামী মহিম হোসেন জাহিদ লোকমুখে জানতে পারে মুন্সীগঞ্জ জেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের মো. মনির হোসেন (৫৩) এর বাড়ির দক্ষিণ পার্শ্বে ব্রীজের নিচে খালে কচুরীপানার মধ্যে অজ্ঞাত মহিলার বিচ্ছিন্ন মস্তক পরে রয়েছে। নিহতের স্বামী উক্ত স্থানে উপস্থিত হয়ে তাহার স্ত্রী পলি আক্তার রিতার নাকফুল, চুল ও মুখমন্ডল দেখে বাদীর বোন পলি আক্তার রিতাকে চিনতে পারে। সংবাদ পেয়ে মুন্সীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পলি আক্তার রিতার দেহ বিচ্ছিন্ন মাথার ময়না তদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। এ ঘটনার নিহত পলি আক্তার রিতার (৩০) ভাই মোঃ মনির হোসেন @ এজাজ (৩৫) বাদী হয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। নিহত পলি বাগের হাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানার উত্তর সুতালড়ি গ্রামের মৃত শাহজাহান হাওলাদার মেয়ে।
এ ঘটনায় পুলিশ মামলা তদন্তে সন্দেহের ভিত্তিতে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত সোহেল ও অপর এক নারী রিতা আক্তার ববিতাকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করলে তারা আদালতে দোষ স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালতে উপস্থিত হয়ে ৮ জন সাক্ষীর জেরা ও জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে আদালত রোববার এ রায় দেন। এ ব্যপারে সরকার পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন জানান, নির্মমভাবে ভিকটিম পলি আক্তার রিতাকে হত্যা করে লাশ বিচ্ছিন্ন ভাবে গুম করার চেষ্টা করেছে। তাছাড়া আসামীরা খুনের বিষয় স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে। সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে আদালত আসামী মো. সোহেলকে পেনাল কোডের ৩০২ ধারায় দোষি সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ডের রায় দেন। এ সময় লাশ গুম করার অপরাধে ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ০৬ (ছয়) মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের রায় ঘোষনা করেন। মামলার অপর আসামী রিতা আক্তার @ ববিতার বিরুদ্ধে ঘটনার বিষয় প্রমানিত না হওয়ায় তাকে বে-কসুল খালাস দেওয়া হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, আজ মুন্সীগঞ্জ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ হত্যা মামলায় দোষি সাব্যস্ত করে আসামী সোহেলকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় ঘোষনা করেন। মামলার অপর আসামী রিতা আক্তার @ ববিতার বিরুদ্ধে ঘটনার বিষয় প্রমানিত না হওয়ায় তাকে বে-কসুল খালাস দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষনার সময় আসামী আদালতে উপস্থিত ছিলো। আদালতের নির্দেশ মতে সোহেলকে কারাগারে প্রেরন করা হয়েছে।
