মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
গজারিয়া কলিমুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মোনতাজ উদ্দিন মর্তুজার বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎসহ নানা রকমের নিয়ম বহির্ভূত কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে গজারিয়া উপজেলা প্রশাসনের কাছে গজারিয়া কলিমুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক প্রফেসর অভিযোগ দাখিল করেছন। অধ্যক্ষ মোনতাজ উদ্দিন মর্তুজার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠার পরেও রহস্যজনকভাবে তিনি সেখানে এখনো নিজ পদে বহাল থাকায় স্থানীয়ভাবে নানা রকমের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
গজারিয়া কলিমুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অধ্যক্ষ মোনতাজ উদ্দিন মর্তুজার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানের টাকা আত্নসাতের সুনিদিষ্ঠ অভিযোগ উঠেছে। এখানে বিদায়ের নামে তিনি ২০২০ সালের মার্চ মাসের প্রথম দিকে ব্যাংক থেকে ১লাখ ৩৬হাজার টাকা উত্তোলন করেন। কিন্তু নানা কারণে সেই অনুষ্ঠানটি আর হয়নি। আর এ খাতের টাকাটি তিনি আর ফেরত না দিয়ে আত্নসাত করেন।
সরকারিভাবে মজিব বর্ষ উদযাপনের জন্য ১লাখ ২৯ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ পায় এ কলেজটি। কিন্তু সেই সময়ে করোনার কারণে অনুষ্ঠানটি আর হয়নি। কিন্তু টাকা ফেরত না দিয়ে সেই টাকা আত্নসাতের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১ তারিখে কলেজ ফান্ড থেকে ১ লাখ টাকা লোন নেন তিনি। এরপর তিনি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৬ তারিখে কলেজ ফান্ড থেকে আবারো ৩লাখ টাকা লোন নেন। কিন্তু এ টাকা তিনি আর ফেরত দেননি বলে অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ স্থানীয় ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে কলেজের এফডিআরের একাউন্ট থেকে তিনি ৩লাখ ৯৫হাজার টাকা উত্তোলন করেন। আর সেই টাকার মধ্যে ২লাখ ৮৫হাজার টাকা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত শিক্ষকদের বেতনবাবদ দেখানো হয়। আর বাকি টাকা তিনি আত্নসাত করেন। এমনটিই জানা যাচ্ছে অভিযোগ পত্রের সূত্রে।
২০১৬ থেকে ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ৮লাখ ২৮হাজার ৮০০টাকা উপবৃত্তির বিপরীতে সরকার কলেজকে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ দেয় স্থানীয় অগ্রণী ব্যাংকের মাধমে। পরে এটি কলেজের জেনারেল একাউন্ট পূবালী ব্যাংকে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি পূবালী ব্যাংকে টাকা যাওয়ার আগেই বিভিন্ন তারিখে চেক ইস্যু করে অগ্রণী ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে আত্নসাত করে।
২০২১ সালের ১৭জুনে তিনি ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ১৪লাখ ২১হাজার ৬৫২ টাকা উত্তোলন করেন। এরপর পূবালী ব্যাংক থেকে ২৬লাখ ৬৯হাজার ৬২১টাকা উত্তোলন করেন। এ দুটি ব্যাংক থেকে মোট ৪০লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। পরে কলেজের এফডিআর একাউন্টে ঐ টাকা থেকে ৩৩লাখ টাকা জমা দেন। এরপর উত্তোলিত টাকা থেকে ৬লাখ টাকা শিক্ষকদের বেতন বাবদ কর্তন করা হয়। কিন্তু বাকি ১লাখ ৯১হাজার ২৭৩ টাকার কোন বৈধ হিসাব কলেজে না পাওয়াতে উল্লেখিত টাকা আত্নসাতের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
২০২৩ সালের ৬এপ্রিল ন্যাশনাল ব্যাংকের এফডিআর একাউন্ট থেকে তিনি ৩লাখ ৭৭হাজার ১৩৫টাকা উত্তোলন করে আত্নসাত করেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৭০ মাসের প্রাতিষ্ঠানিক বেতন জমা হয়। কিন্তু ব্যাংকে পিএফের একাউন্টে জমা পড়েছে ৬০ মাসের বেতনের টাকা। বাকি ১০ মাসের বেতনের টাকা তিনি জমা না দিয়ে আত্নসাত করেছেন।
অধ্যক্ষ মোনতাজ উদ্দিন মর্তুজার বিরুদ্ধে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে এখানকার সুশীল সমাজ সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিযোগকারীদের মধ্যে রয়েছে কলেজের একাধিক প্রফেসর মন্ডলী ও একই কলেজের এইচএসসি ও অনার্স কোর্সের অনেক শিক্ষার্থীবৃন্দ।
অভিযোগ কারীদের মধ্যে সহকারী অধ্যাপক মোঃ জালাল উদ্দিন, প্রভাষক মোঃ আল-আমিন, সাইফুর রহমান, মোরশেদা খানম, শাহিনুর ইসলাম জানান, অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে। সেই হিসেবে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে দুর্নীতির তদন্ত করা হয়েছে।
অধ্যক্ষ মোনতাজ উদ্দিন মুর্তজা বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ সত্য নয় বলে তিনি দাবি করেন। তার বিরুদ্ধে এখানে ষড়যন্ত্র চলছে।
গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার বলেন, অধ্যক্ষ মোনতাজ উদ্দিন মুর্তজার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট পেয়েছি। তদন্তের রিপোর্টের ফলাফল যথাযথ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে পাঠানো হবে।