গজারিয়া ( মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় সড়ক ও জনপদ এবং এক ব্যক্তির লিজকৃত জমি প্রভাব খাটিয়ে দখল করে রেস্তরা নির্মাণ করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে গজারিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম মন্টু ও তার ভাইয়েরা এ রেস্তরা নির্মাণ কাজ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,১৯৮৩ বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের নকিমেরকান্দি মৌজায় আরএস ১৪নং খতিয়ান ৪,৫,৬ নং দাগে ৬২ শতাংশ অর্পিত সম্পত্তি ৬০ বছরের জন্য লিজ পান বালুয়াকান্দি এলাকার কবির আহমেদ মাস্টার। টিনের বেড়া এবং কিছু কিছু গাছগাছালি লাগিয়ে সম্পত্তি দখলে রেখেছিলেন তিনি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার সময় কিছু জমি অধিগ্রহণ করার পর ২০১২ সালে ৪৭ শতাংশ সম্পত্তি গ্যাজেটভুক্ত হয়ে তার নামে আরএস রেকর্ড অনুযায়ী খতিয়ান হয়। তিনি মারা যাওয়ার পর তার ছেলে মোস্তফা সেলিম ২০১৯ সালে একসাথে ২৯ বছরের লিজের টাকা পরিশোধ করেন। সে সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক( রাজস্ব)এর উপস্থিতিতে জমি পরিমাপ করে তাকে তার দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নিয়মিতভাবে বাৎসরিক লিজের টাকা পরিশোধ করে ওই সম্পত্তি শান্তিপূর্ণ ভোগদখল করছিলেন তিনি। এরমধ্যে ২০২০ সালে তাদের না জানিয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে ৪৭ শতাংশ সম্পত্তি থেকে ১৫ শতাংশ জমি আনিসুর রহমান শিকদার এবং ৯ শতাংশ জমি নইমুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে লিজ দিয়ে দেয় উপজেলা প্রশাসন। অবশিষ্ট ২৩ শতাংশ সম্পত্তি মোস্তফা সেলিমের দখলে থাকলেও সম্প্রতি সেটিও জোরপূর্বক দখল করে রেস্তরা নির্মাণের কাজ করছে গজারিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম মন্টুরা। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করছে তার বড় ভাই বালুয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান জুয়েল, সেন্টু,সজল সহ আরো কয়েকজন।
এদিকে ওই জায়গা নিয়ে ২০২০ সালে হাইকোর্ট রিটপিটিশ করেন আনিসুর রহমান শিকদার।সে প্রেক্ষিতে আদালত ওই জায়গায় স্থগিতাদেশ দেন।
তবে এ আদেশ উপেক্ষা স্থানীয় উপজেলা ও ভূমি কার্যালয়কে ম্যানেজ করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দখলদাররা।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে বালুয়াকান্দি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মেসার্স সিকদার ফিলিং স্টেশনের পাশে সড়ক ও জনপদের জায়গাসহ প্রায় ১০০ শতাংশের মত জায়গায় টিনের বেড়া দিয়ে দখল করা হয়েছে। সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। একাধিক জায়গায় লাগানো আছে সাইনবোর্ড। সেখানে লিখা আছে উক্ত জায়গার মালিক সাইফুল ইসলাম মন্টু।
কবির আহমেদের ছেলে ভুক্তভোগী মোস্তফা সেলিম বলেন, প্রথম থেকেই আমাদের সাথে অবিচার করা হচ্ছে। ৪৭ শতাংশ সম্পত্তি থেকে দুজনকে ২৪ শতাংশ সম্পত্তি যেভাবে লিজ দেয়া হয়েছে তা সঠিক হয়নি। অবশিষ্ট ২৩ শতাংশ জায়গা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে মেপে আমাদের দখল বুঝিয়ে দিয়েছে। এখন সেই সম্পত্তি জোর করে দখল করেছে ভাইস চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম মন্টু ও তার লোকজন।আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা চাইতে গেলে তারা আমাদের জানান দখলকারীরা অত্যন্ত প্রভাবশালী তাদের বিরুদ্ধে কিছু করা যাবে না। আমরা কোথায় যাবো?
তিনি আরো বলেন,সম্পত্তি নিয়ে আনিসুর রহমান সিকদার উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করলে আদালত একটি রুল জারি করে। রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উক্ত জায়গার উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। আমরাও সম্পত্তির বেদখলের হাত থেকে রক্ষা পেতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করি। দখরকারীরা আদালতের নিষেধাজ্ঞা কিছুই মানছেন না।
এ বিষয়ে রিটকারী আনিসুর রহমান সিকদারকে একাধিক বার কল করা হলেও তিনি লাইন কেটে দেন।
জায়গা দখলের বিষয়ে অভিযুক্ত গজারিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম মন্টুর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।তবে তার পক্ষে এবং দখলকৃত জায়গার আরেক মালিক দাবিদার সাইফুল ইসলামের বড় ভাই সাখাওয়াত হোসাইন সেন্টু বলেন,মোস্তফা সেলিমদের জায়গার খতিয়ান ও আমাদের জায়গার খতিয়ানও ভিন্ন।যে জায়গায় রেস্তরা বানানো হচ্ছে সেটি আমাদের কেনা জায়গা।
সেটি আপনাদের জায়গা হলে তৎকালীন নায়েব,সার্ভেয়ার, ভূমি কর্মকর্তা এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাপঝোপ করে মোস্তফাদের বুঝিয়ে দিয়েছিলো কেনো?এ ব্যাপারে সাখাওয়াত হোসাইন বলেন,তারা ভুল করেছিল।আমরা বর্তমান এসিল্যান্ড এবং ইউএনওকে জানিয়েছি।তারা আমাদের কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন।
বিরোধপূর্ণ ওই জায়গাটিতে কাউকে কোন কাজ করার অনুমতিদেননি বলে জানান গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার। তিনি বলেন, জায়গাটি নিয়ে আদালতের রিটপিটিশন রয়েছে।এখানে আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারিনা।ওই জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির মাজারের মত রয়েছে।সেটি অক্ষত রাখার ব্যাপারে বলেছিলাম।ভাইস চেয়ারম্যানের পক্ষের লোকজন সেটি ঠিকঠাক রাখার কথা দিয়েছেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা স্বত্বেও সেখানে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে,সেই সঙ্গে মাজারটিও চতুর দিক থেকে বালুভরাট করা হয়েছে।এ ব্যপারে উপজেলা প্রশাসনের কোন কিছু করার আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,এটা পুলিশের কাজ।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সড়কের জন্য ৩০০ ফুট চওড়া করে জায়গা অধিগ্রণ করে নারায়ণগঞ্জ সড়ক জনপথ অধিদপ্তর।সে জায়গার মধ্যে ৮০ ফুট চওড়া চার লেনের সড়ক করা হয়েছে। অবশিষ্ট জায়গা মহাসড়কের দু’পাশে রয়েছে বলে জানান নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস।
তিনি বলেন,গজারিয়াসহ মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে কিছু অসাধু ব্যক্তি দখল করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করার চেষ্টা করছে। আমরা বিষয়টি জানার পরে তাদেরকে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানিয়েছি। এরপরও দখলদাররা বিষয়গুলোতে কর্ণপাত করছে না। আমরা জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছে এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে চিঠিতে অবহিত করেছি। সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
০৩-১০-২০২৪খ্রি.